মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ঃ
বান্দরবানের লামা উপজেলায় কমলার চাষে লাভের মুখ দেখছে কৃষকরা। আর্থিক সচ্ছলতার অপার সম্ভাবনা দেখে উপজাতিদের পাশাপাশি বাঙালিরাও কমলা চাষে ঝুঁকছে। তবে পচনশীল এই ফলের যথাযথ সংরক্ষণাগার না থাকায় তারা আর্থিক ঝুঁকিতেও রয়েছেন চাষীরা।
লামা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে লামা উপজেলায় ১০৯ হেক্টর পাহাড়ি ভূমিতে কমলার চাষ হয়েছে। তবে বেসরকারী হিসেব মতে এর পরিধি তিনগুন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ৭ থেকে ১০ বছর যাবৎ লামা উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে কমলা চাষ। এক সময় এখানের পাহাড় গুলোতে ফলদ, বনজ গাছের বাগান ও জুমের ব্যাপক আবাদ হত। এখন কমলার মৌসুম হওয়ায় অধিকাংশ পাহাড়ে গাছে এখন থোকায় থোকায় কমলা ধরে আছে। সর্বত্র সচরাচর বিক্রি হচ্ছে উৎপাদিত টসটসে এসব রসালো কমলা। এখানের কমলার স্বাদ ও আকারের দিক থেকে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কমলার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। তাই দিন দিন কদর বাড়ছে কমলার। এছাড়া এখানকার পাহাড়ের মাটি, আবহাওয়া কমলা চাষের উপযোগী। প্রতিদিনই এখানে উৎপাদিত কমলা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।
জানা গেছে, লামা উপজেলার গজালিয়া, ফাঁসিয়াখালী, রুপসীপাড়া, লামা সদর ও সরই ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে তিন শতাধিকেরও বেশি কমলা আর মাল্টা বাগান। চলতি বছর উপজেলায় প্রায় ১০৯ হেক্টর জমিতে কমলা উৎপাদিত হয়েছে।
লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের লেবু পালং এলাকার চিন্তাবর পাড়ার কমলা চাষী মেনরিং মুরুং জানান, এবছর ২ একর পাহাড়ে কমলা আবাদ করেছে। প্রথম বছর একর প্রতি বীজ সংগ্রহ, চারা পলিব্যাগ করা, জায়গা পরিস্কার, কীটনাশক ও শ্রমিক বাবদ ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও ৫/৬ বছর পর একে একে কমলা ধরা শুরু করে। অবৈজ্ঞানিক ভাবে বীজ সংগ্রহ করে পাহাড়ের মাছাংয়ের ওপর পলিব্যাগ করে চারা উৎপাদন করে শেষে পাহাড়ে চারা লাগিয়ে থাকেন চাষীরা। প্রতি সপ্তাহে ২বার কমলা উত্তোলন করে বিক্রি করা যায়। তিনি এবছর ২ একর জমির কমলা বিক্রি করে ২ লাখ টাকা পেয়েছেন ।
লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূরে আলম জানায়, পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়ি মাটি কমলা চাষের উপযোগী। নিজস্ব মূলধন না থাকায় বাম্পার ফলনের পরও অগ্রিম বাগান বিক্রি করে দেয় চাষীরা। এদিকে ব্যবসায়ীরা রঙ আসার আগেই থোকায় থোকায় ছোট কমলা ছিড়ে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে উৎপাদিত কমলার স্বাদ অনেক কমে যাচ্ছে এবং খেতে একটু টক লাগছে। কমলাগুলো বড় হওয়ার সুযোগ দিলে এবং সঠিক পরিচর্যায় কমলা বাগান সংরক্ষণ করা গেলে কমলা চাষের জন্য বিখ্যাত হবে অত্র উপজেলা। কমলা বিক্রির মাধ্যমে এখানের আরো শত শত চাষী স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। প্রক্রিয়াজাত এবং বাজারজাত করণের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর প্রায় ২০/২৫ লাখ টাকার কমলা বাগানেই পচে যাচ্ছে।
পাঠকের মতামত: